সাইবার ক্রাইম কি এবং এর ধরন সমূহ

সাইবার ক্রাইম শব্দটি  কেবল বাংলাদেশেই নয়, এটি প্রতিটি দেশে অনেক পরিচিত এবং ভীতিজনক একটি শব্দ। এই শব্দের সাথে পরিচিত হোক বা না হোক, প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ লোক এর শিকার হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম বিশ্বের কোন নতুন ধরনের অপরাধ নয়। তথ্য চুরি, তথ্য বিকৃতি, জালিয়াতি, ব্ল্যাকমেইল, মানি লন্ডারিং ইত্যাদির মত সাধারণ অপরাধগুলি ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হলে তা সাইবার ক্রাইম হিসাবে ধরা হয়।
সহজ ভাষায়, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোন অপরাধ সংঘটিত হলে তাকে সাইবার ক্রাইম বলে। অন্যান্য ভাষায় বলা যায়, সাইবার ক্রাইম এমন একটি অপরাধ, যাতে প্রধানত কম্পিউটার বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র ব্যবহৃত হয় এবং অপরাধীরা বিশ্বব্যাপী অপরাধে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) সাইবার ক্রাইমকে চারটি মূল শ্রেণিতে বিভক্ত করে – ইনসাইডারস, হ্যাকার, ভাইরাস রাইটারস এবং ক্রিমিনাল গ্রুপ।
বর্তমানে উন্নত দেশ গুলোতে সাইবার ক্রাইম কে অপরাধের তালিকায় শীর্ষে স্থান দেওয়া হয়েছে | তৈরি হয়েছে সাইবার ক্রাইম রোধের জন্য নতুন নতুন নিয়ম ও আইন| অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও সাইবার ক্রাইম ও এ সংক্রান্ত অপরাধ গুলো দমনের আইন প্রনয়ন করা আছে। কিন্তু উক্ত আইন গুলো অনেকেরই জানা নাই। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ তে এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া আছে|
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৬ ধারায় বলা আছে, “যদি কোনো ব্যক্তি জনসাধারণের বা কোনো ব্যক্তির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে বা ক্ষতি হবে মর্মে জানা সত্ত্বেও এমন কোনো কাজ করেন, যার ফলে কোনো কম্পিউটার রিসোর্সের কোনো তথ্যবিনাশ, বাতিল বা পরিবর্তিত হয় বা তার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাস পায় বা অন্য কোনোভাবে একে ক্ষতিগ্রস্ত করে| এমন কোনো কম্পিউটার সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করার মাধ্যমে এর ক্ষতিসাধন করেন, কিন্তু তিনি মালিক বা দখলদার নন, তাহলে তাঁর এই কাজ হবে একটি হ্যাকিং অপরাধ| কোনো ব্যক্তি হ্যাকিং অপরাধ করলে তিনি অনূর্ধ্ব ১০ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন | এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন বা উভয়দণ্ড দেওয়া যেতে পারে |”
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে বা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহলে তার এই কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে |”

বিভিন্ন ধরনের সাইবার ক্রাইম:

স্প্যামিং এবং জাঙ্ক মেইলঃ এটি মানুষ কে ঠকানোর একটি দুর্দান্ত উপায়। এটি মূলত সম্পূর্ণভাবে সোসাল মিডিয়া ও  ইমেলের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। ফেক আইডি/ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করে তারা আপনার ঠিকানা, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড নম্বর এবং এমনকি ফোন নম্বর সংগ্রহ করে। বতমানে মাঝে মাঝে অনেকেই লটারি জিতে কয়েক লাক্ষ পাউন্ড বা বিদেশি মূদ্রা পেয়েছেন এমন ম্যাসেজ পেয়ে থাকেন। ম্যাসেজে বলা থাকে আপনার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য তাদের ইমেইল এড্রেসে পাঠিয়ে দিতে। এটি মূলত একটি স্পাম ম্যাসেজ।
পর্নোগ্রাফিঃ পর্ন সাইট গুলো সবচেয়ে বিপজ্জনক জিনিস। বেশির ভাগ সাইট ক্ষতিকর কম্পিউটার ভাইরাস সম্বলিত। অনেক সাইট পপআপ এড সো করে এবং কখনও কখনও ইমেল এড্রেস চেয়ে থাকে। এই সাইট গুলো আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রনের প্রধান কারন হতে পারে।
হ্যাকিংঃ হ্যাকার আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস বিস্তার করে আপনার সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করতে পারে। তাছাড়া হ্যাকার আপনার সোসাল এ্যকাউন্ট ও অন্যান্য ওয়েব সাইট হ্যাক করে ক্ষতি করতে পারে। তারা ই-কমার্স ওয়েবসাইটের ডেটাবেস চুরি করে ক্রেডিট কার্ড নম্বর হ্যাক করতে পারে। যা আপনার ব্যবসায়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ব্লাক হ্যাট হ্যাকিং একটি গুরুতর অপরাধ।
ড্রাগ ব্যবসায়ঃ মাদক ব্যবসা চক্র ইন্টারনেটেও সক্রিয়। তারা তাদের ওয়েবসাইটে মাদকদ্রব্যের ক্রয় মূল্য, বণ্টন ব্যবস্থা ইত্যাদি তথ্য বিশ্বব্যাপী মানুষকে সরবরাহ করছে।
সাইবার ক্রাইমে নারীর নির্যাতনঃ আমাদের দেশে অনেক মেয়েই সাইবার ক্রাইমের স্বীকার। সাইবার ক্রাইমের অজ্ঞাতার কারনে আমাদের দেশের অনেক অভিনেত্রী সহ অন্য মেয়েদের অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক মিডিয়াতে ধর্ষণের ভিডিও এবং যৌন দৃশ্য পোস্ট করার মত বেশ কিছু অপরাধও সংঘঠিত হয়েছে। অন্যের ছবি দিয়ে ফেক অ্যাকাউন্ট খোলা, নগ্ন ছবি প্রকাশের হুমকি ইত্যাদি অপরাধের মাত্রাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী শত শত কোটি ডলার আর্থিক ক্ষতির সম্মুক্ষিন হয় এই সাইবার ক্রাইমের জন্য। ২006 সালে কম্পিউটার ইকোনোমিক্স জরিপ অনুযায়ী ভাইরাসের কারণে ১৩.৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সারাবিশ্ব।
তো আমরা জানলাম সাইবার ক্রাইম কি এবং এর ধরন সমূহ। আমর সাইবার ক্রাইম থেকে বিরত থাকব এবং অন্য কে সচেতন করব। আজ এই পর্যন্তই। আবার দেখা হবে অন্য কোন পোস্টে, ভিন্ন কোন টপিক নিয়ে। ততদিন ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং TechBartaBD এর সাথেই থাকুন।
আল্লাহ হাফেজ…

Subscribe
Notify of
guest

0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
furtdso linopv
furtdso linopv
4 years ago

I¦ve recently started a web site, the information you provide on this website has helped me greatly. Thank you for all of your time & work.

furtdsolinopv
furtdsolinopv
4 years ago

hi!,I like your writing very much! share we communicate more about your article on AOL? I require an expert on this area to solve my problem. Maybe that’s you! Looking forward to see you.

You cannot copy content of this page