কোন একজন ব্যবহারকারীকে মনিটরের পর্দায় মহাশূন্যের কোন একটি গ্রহের ছবি দেখানো হচ্ছে। এই অবস্থায় ব্যবহারকারী তার সংবেদনশীল গ্লোবস পরা হাত নাড়াচাড়া করবে। নাড়াচাড়ার ধরন এমন যে বস্তুটিকে ব্যবহারকারী হাত দিয়ে ধরছে। হাতের নাড়াচাড়ায় মনিটরের চিত্রেরও পরিবর্তন এবং বস্তুটিকে ধরার পর বস্তুর অবস্থাও মনিটরে দেখা যায়। হেডফোনের সাহায্যে বস্তুকে ধরা, ধরার পর বস্তুর অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তনের সকল প্রক্রিয়ার শব্দ শোনা যায়। ব্যবহারকারী পৃথিবীর কর্মকান্ডের সহিত মনেপ্রাণে এবং অনুভবে একাত্ম হয়ে যায়। এইভাবে ব্যবহারকারী কল্পনার জগতে একাত্ম হয়ে যাওয়াকে বলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হলো সেই প্রযুক্তি যা ত্রিমাত্রিক বিশ্ব এবং যার দৃশ্যমানতা বাহক জীবন্ত। প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের চেতনা উদ্যোগকারী যোগান নির্ভর কল্পনাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা অনুভবে বাস্তবতা বলে।
সংবেদনশীল সংবেদনশীল গ্রাফিক্স তৈরির মাধ্যমে বাস্তবের ত্রিমাত্রিক অবস্থা কম্পিউটার পর্দায় তৈরি করে সংবেদনশীল হেলমেট, গ্লোবস, সানগ্লাস ইত্যাদি পরিধান করে সবকিছুর অনুভব করার পদ্ধতি হলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ত্রিমাত্রিক ইমেজ তৈরির মাধ্যমে অতি অসম্ভভ কাজও করা সম্ভবপর হয়। এখানে ব্যবহারকারী নিজের ইচ্ছামত অসম্ভব সব কাজ করতে পারে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে প্রবেশ করার জন্য ব্যবহারকারীকে মাথায় বিশেষ হেলমেট, চোখে বিশেষ গ্লাস এবং হাতে পরতে হয় বিশেষ ধরণের গ্লোবস। ফলে ব্যবহারকারী কোন শারীরিক ঝুঁকি বা বিপদ ছাড়াই বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এর সাহায্যে কোন দৃশ্য দেখা ও শোনা যায়। হাতের সাথে সংযুক্ত গ্লোবস দ্বারা প্রয়োজনীয় কোন কমান্ড বা নির্দেশ দেওয়া হয় এবং সঙ্গে প্রয়োজনীয় দৃশ্যের অবতারণা এবং কোন নির্দিষ্ট কাজের নির্দেশ বাস্তবায়ন করে ব্যবহারকারীকে অনুভবের এক অন্য পৃথিবীতে নিয়ে যায়।
কিছু নির্দিষ্ট যন্ত্রে সজ্জিত একজন মানুষ পুরোপুরি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড বা কল্পনার জগতে স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয় হচ্ছে দৃষ্টি, শব্দ ও স্পর্শ। কল্পনার জগতের সবকিছু দেখতে, শুনতে ও অনুভব করতে এই তিনটি উপাদান ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর যে সকল যন্ত্রের সহায়তায় এই বিশেষ অনুভূতির কল্পনার জগতে প্রবেশ করা সম্ভব তা হচ্ছে বিশেষ ধরনের চশমা, হেডফোন, গ্লোবস ইত্যাদি।
প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি -এর প্রভাব
প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রেয়েলিটির প্রভাব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবাস্তব সব দৃশ্যকে বাস্তব দৃশ্যে পরিণত করা হচ্ছে। যেমন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেমস তৈরি, কার চালনা প্রশিক্ষণ, বিমান চালনা প্রশিক্ষণ ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স তৈরি, নগর পরিকল্পনা ইত্যাদি জতিল কাজে ব্যবহার শুরু হয়েছে। বিভিন্ন পেশা ও গবেষণায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহারের ফলে সমাজ এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
বিনোদনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবাস্তব সব দৃশ্যকে বাস্তব দৃশ্যে পরিণত করা হচ্ছে। টাইটানিক, সিন্দাবাদ, স্পাইদারম্যান ইত্যাদি সব ছবিতে যেসব আশ্চার্য দৃশ্য দেখানো হয়েছে তা সবই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে বাস্তব সম্মত গ্রাফিক্স বা ছবি তৈরি করে।
চিকিৎসায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ রোগীর মস্তিকের বিভিন্ন রোগ সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য ও উপাত্তের মাধ্যমে সহজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছে।
ডাক্তার প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
ডাক্তার প্রশিক্ষণে শরীরের বিভিন্ন জটিল ও সংবেদনশীল অংশের গঠন যা স্বচক্ষে দেখলে যে অভিজ্ঞতা লাভ করা যায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে তা বার বার দেখার সুযোগ থাকায় তার চেয়ে বেশী অভিজ্ঞতা লাভ করা হচ্ছে এবং ঐ সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে সঠিক ও বাস্তব জ্ঞান লাভ করা সম্ভব হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় উদ্দীপিত এবং স্পর্শ ইন্টারফেস ব্যবহারকারীকে কল্পনার বস্তুকে অনুভুতি দেয়। যেমন করে ডাক্তারগন ধমনীর স্পর্শ অনুভব করেন।
মিলিটারি, বিমান ও নৌবাহিনীতে প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে সিম্যুলেটেড ওয়ার দ্বারা সৈন্যদের অনেক বেশি বাস্তব এবং উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে মিলিটারি, বিমান ও নৌবাহিনীতে অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার, বিমান চালনা প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ক্কাজ নিখুঁতভাবে কম সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
বর্তমানে যাদুঘরে দর্শনার্থীদের বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে উপস্থাপন করে দেখানো হচ্ছে। এতে দর্শনার্থীরা বিষয়টি দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করছেন।
নগর পরিকল্পনায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
নগর পরিকল্পনায় ত্রিমাত্রিক ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগ ঘটিয়ে নগর উন্নয়ন রূপরেখা, নগর উন্নয়ন নকশা, নগর যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদি সহজ ও আকর্ষণীয়ভাবে বর্ণনা করা যায়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির নেতিবাচক দিক
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির উচ্চমূল্যের এবং এই প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামও খুবই মুল্যবান ও ব্যয়বহুল।
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে মানুষ তার কল্পনার রাজ্যে ইচ্ছেমত বিচরণ করার সুযোগ পাবে। তখন মানুষ বেশির ভাগ সময় কাটবে কল্পনা জগতে এবং খুব কম সময় থাকবে বাস্তব জগতে।
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগতে বেশি সময় কাটানোর ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে। অনেক সময় দৃষ্টিশক্তি বা শ্রবণশক্তির ক্ষতিসাধন হতে পারে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগক্ষেত্রগুলো হচ্ছে –
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগক্ষেত্রের মধ্যে কম্পিউটার নির্ভর নকশায়ন, মেডিকেল চেকআপ ও চিকিৎসা, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, বৈমানিকদের বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ, ড্রাইভিং নির্দেশনা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র ভ্রমণ, মহাকাশ পর্যবেক্ষণ, পণ্য দ্রব্য প্রদর্শনী, চাকুরীজীবিদের প্রশিক্ষণ, ত্রিমাত্রিক ভিডিও চিত্র সংবলিত গেম ইত্যাদি বেশ উল্লেখযোগ্য।
আজকের মত এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে এই রকম আরও কিছু বিষয় নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হবো সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর Tech Barta Bd-এর সাথেই থাকবেন।
আল্লাহ্ হাফেজ…